বসুন্ধরা সিটির লিফটে দাঁড়িয়ে রাগে ফোঁসফোঁস করছে প্রাণো। রাগের কারণটা হলো নবীন আঙ্কেল। কিছুদিন আগে সে তাকে ভাইয়া বলে ডাকতে বলেছিলো। তার নাকি বয়স বেশি না, পায়ে গুলি লেগেছিলো বলে রিটায়ার্মেন্ট নিয়েছে। বয়স বেশি না সেটা প্রাণো নিজেও দেখেছে। তাই বলে যাকে আঙ্কেল ডাকতো তাকে এখন হুট করেই কি ভাইয়া ডাকা যায়? ভাইয়া ডাকতে হলে প্রথম থেকেই বলতো ভাইয়া ডাকতে! তবুও প্রাণো চেষ্টা করতো ভাইয়া ডাকতে। এটা নিয়ে অস্বস্তি হলেও কিছু মনেও করেনি সে৷ কিছুদিন যাবৎ আবার নতুন নাটক শুরু করেছে৷ সন্ধ্যায় দোকানে না এসে লাঞ্চের আগেই চলে আসে৷ এসে হাজার রকম গল্প বলে৷ সেসব গল্পের মধ্যে তার সুখ দুঃখের কথাই থাকে বেশি। তার বৌ তাকে ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছে। ছোটো ছোটো দুটো বাচ্চা। মেয়েটার বয়স ৩ বছর, ছেলেটার ৫ মাস। বাচ্চা দুটোকে দেখতেও নাকি দেয় না৷ উত্তরায় তিনতলা ডুপ্লেক্স বাড়িতে একা একা তার দম বন্ধ হয়ে যায়৷ এতকিছু সহ্য করেও প্রাণো চুপচাপ ছিলো। কিন্তু আজ আর চুপ থাকতে পারলো না৷ কিছুক্ষণ আগে ভদ্রলোক তাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যাংকে জমা দিতে পাঠাচ্ছিলো। একাউন্ট নাম্বার ও যাবতীয় তথ্য দিয়ে দিয়েছে। প্রাণো বের হবার আগে ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন,

"টাকা কোথায় নিয়েছো?"

"ব্যাগে।"

"এতো টাকা কেউ বাগে নেয় বোকা?"

"তাহলে?"

"ব্রা অথবা প্যান্টির ভেতরে নাও।"

প্রাণো দাঁত কিড়মিড় করে বললো,

"দরকার নেই৷ আমি ব্যাগ সামলে রাখবো।"

"যেটা বলছি সেটা করো। যেখানে বলেছি সেখানে নাও। এরপর আমাকে দেখাও। যদি মনে হয় ঠিক আছে তাহলে যাবে।"

প্রাণো হুট করেই নবীন আঙ্কেলের গালে একটা চড় মারলো। দোকানের সেলসম্যানরা সব হা করে চেয়ে রইলো। এতক্ষণ ওরা সব দোকানের বাইরের দিকে ছিলো। কী কথোপকথন হয়েছে কেউ শোনেনি। তাই বিস্ময় ধরে রাখতে পারছিলো না তারা। নবীন আঙ্কেল চড় খেয়ে বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারেনি। প্রাণো ব্যাগ থেকে টাকাগুলো বের করে লোকটার গায়ে ছুঁড়ে মেরে বলল,

"আপনার টাকা আপনি জমা দেন। নাহলে আপনার মা বোনকে ডেকে এনে তাদের ব্রা প্যান্টির মধ্যে দিয়ে পাঠান।"

এ কথা বলে প্রাণো দোকান থেকে বের হয়ে এসেছে। অসহ্য লাগছে তার।