দেশের নামে যুদ্ধ হয়। আর সে যুদ্ধ করে বাস্তবের ব্যক্তিমানুষ। সম্মুখযোদ্ধা ছাড়া আরও কত রকম মানুষের ভূমিকা থাকে মুক্তিযুদ্ধের মতো একটি বড় ঘটনার পেছনে। বলা যায় ছোট ছোট অনেক যুদ্ধ এক হয়ে একটি বড় যুদ্ধ তৈরি হয়। কিন্তু ছকবাঁধা কাঠামোর বাইরে অবস্থান করায় সেই সব মানুষের অনেকে আমাদের পরিচিত বয়ানের বাইরে রয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধকালের নারী সেই বয়ানের বাইরে থাকা এক চরিত্র। সম্মুখযুদ্ধে অংশ না নিয়েও যারা নানাভাবে এই যুদ্ধকে সম্ভব ও সফল করে তুলেছে। প্রথাগত ইতিহাসের কোথাও নারীর এই যুদ্ধের উল্লেখ থাকে না। এই বইয়ের গল্পগুলো মূলত সে রকম কয়েকজন নারীর।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামের রাজনৈতিক ভূখণ্ডের অভ্যূদয়। বাংলাদেশকে বুঝতে, তার ভবিষ্যেক নির্মাণ করতে তাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের নানা মাত্রাকে নিরন্তর সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণ প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক দিক নিয়ে চর্চা হলেও তুলনামূলকভাবে অনালোচিত রয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন চিকিত্সা এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক মাত্রাটি। যুদ্ধ সামরিক ও বেসামরিক মানুষকে এক নৃশংস পরিস্থিতির মুখোমুখি করে। মানুষ আহত, নিহত হন, বরণ করেন পঙ্গুত্ব। যুদ্ধকালে বিপদগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য এবং চিকিত্সার ব্যবস্থা তাই যুদ্ধেরই অংশ। মুক্তিযুদ্ধকালের সেই চিকিত্সাযুদ্ধের ইতিহাস সন্ধানই এই বইয়ের লক্ষ্য। দীর্ঘদিনের নিবিড় গবেষণায় শাহাদুজ্জামান ও খায়রুল ইসলাম এ বইয়ে তুলে এনেছেন মুক্তিযুদ্ধের অনালোচিত সেই অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধের চিকিত্সা ইতিহাস গ্রন্থটি মুক্তিযুদ্ধচর্চায় একটি ব্যতিক্রমী সংযোজন।
১৯৭১ সালের মার্চে পাকিস্তানে সাংবিধানিক গণতন্ত্রের সম্ভাবন শরুতেই মুখ থুবড়ে পড়ে। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। সামরিক সরকার অচল হয়ে যায়। শুরু হয় লোক দেখানো সংলাপ। একপর্যায়ে সেটিও ভেঙে পড়ে। ২৫ মার্চ রাতে বাঙালির ওপর পাকিস্তানের সামরিক অভিযান ও গণহত্যা শুরু হয়। তাৎক্ষণিক ভাবে আরম্ভ হয় বাঙালির প্রতিরোধ যুদ্ধ। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে শেখ মুজিব গ্রেপ্তার হন। সংক্ষেপে এটাই এ বইয়ের পটভূমি।
শেখ মুজিব পাকিস্তানের বন্দি দশা থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডনে যান বাহাত্তরের ৮ জানুয়ারি। সেখানে ছিলেন ২৬ ঘন্টা। পেয়েছিলেন রাষ্ট্র প্রধানের মর্যাদা। ১০ জানুয়ারি তিনি নয়াদিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরে এলে বীরের সম্মান পান। এই সাড়ে ৯ মাসে ঘটে গেছে ইতিহাসের বিরাট পালাবদল। একাত্তরের মার্চ থেকে বাহাত্তরের জানুয়ারি পর্যন্ত ঘটনাবহুল পর্বটি ঘিরে এ বই। এখানে মূল আখ্যান পাঁচটি– শেখ মুজিবের গ্রেপ্তার, বন্দিজীবন ও বিচার, মুক্তি, লন্ডন ও দিল্লিপর্ব এবং দেশে ফিরে এসে কঠিন এক বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া।